মাদরাসা দারুল হাদীস সালাফিইয়াহ - এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

১. আরবী ব্যাকরণ ও বালাগাত (অলংকার শাস্ত্র) ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয়সমুহ এবং কুরআন-হাদীস থেকে উতসারিত ফিকাহ (ইসলামী আইন শাস্ত্র), আকাঈদ শাস্ত্র (ইসলামী দর্শন) ইত্যাদি বিষয়সহ কুরআন-হাদীসের গভীরতর ও সহজতর শিক্ষাদান।
২. কিতাব ও সুন্নাহ শিক্ষার সম্প্রসারণ।
৩. মুসলিমদের আক্বীদা (ধর্মীয় বিশ্বাস) বিশুদ্ধকরন।
৪. জীবনের সর্বস্তরে কুরআন ও সুন্নাহর বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
৫. সন্দেহ নিরসন ও অন্ধ বিশ্বাস দূর করে সমাজ সংস্কার।
৬. কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরনের মাধ্যমে নৈতিক চরিত্র আল্লাহ ভীরু, সৎ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা।
৭. গবেষক, মহাক্কিক, আলেম, মুফতি, লিখক, মুজতাহিদ, বক্তা, মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও ফকীহ গঠন করা।
৮. মুসলিম সন্তানদের অন্তরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা বিশ্বাস ও ইসলামী চিন্তা চেতনাকে উন্মেষ ও বাস্তবায়ন।
৯. ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির সংরক্ষন এবং সমৃদ্ধ ইসলামী উত্তরাধিকারের তত্ত্বাবধান।
১০. ঐশী জ্ঞান গরিমা সমৃদ্ধ ইসলামী বেশ-ভূষা ও ভাবধারায় সজ্জিত এবং দ্বীনী খিদমতে নিবেদিত প্রাণ একটি সর্বোচ্চ শক্তিশালী দাওয়াতি কাফেলা ও আদর্শ আলেম সমাজ গঠন পূর্বক মহানবী (সা:) এর সুন্নত ও আদর্শের অনুস্মরনক্রমে মহান রাব্বুল আলামীনের হুকুম পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ইহলৌকিক কল্যাণ এবং পরলৌকিক শান্তি ও মুক্তি লাভের প্রয়াস চালানো।
১১. ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং সমৃদ্ধ ইসলামী উত্তরাধিকারের ত্তত্বাবধান।
১২. বিশিষ্ট ও সাধারণ সর্ব শ্রেনীর মানুষের উপযোগী করে ইসলামকে উপস্থাপন করণ। নিম্মোক্ত বাণীতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাঃ) এ কথাই বলেছেন-“তুমি যদি মানুষের সামনে এমন কথা বল যা তাদের অনুধাবন শক্তির উর্ধ্বে, তাহলে তা কারো কারো জন্য ফেতনার কারণ হয়ে যাবে”। ( মুকাদ্দিমাতু মুসলিম, পৃষ্ঠা-৯)

মাদরাসা দারুল হাদীস সালাফিইয়াহ - এর পটভূমি

পাঁচরুখী অত্র এলাকায় মুসলিম বসতিপূর্ণ একটি বিরাট গ্রাম। এখানে অধিকাংশ বাসিন্দাই মুসলমান। এ গ্রামে এগারটি জামে মসজিদ বিদ্যমান। এই জনপদে রয়েছে দু’টি প্রাইমারী স্কুল, চারটি কিন্ডার গার্টেন, একটি হাই স্কুল, একটি কলেজ এবং ২টি বাজার। আরও রয়েছে একটি ডাকঘর, দু’টি ঈদগাহ ও দু’টি কবরস্থান।
এ গ্রামে কোন দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। এ দৈন্য দশার অবসানে গ্রামের দুই জন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সহোদর জনাব আলহাজ্ব সাহেব আলী ফকির ও তার অনুজ জনাব আলহাজ্ব ইউসুফ আলী ফকির সাহেবান নিজ বাড়িতে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা আরম্ভ করেন। ইংরেজী ১৯৫৫ সনে, সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে, যার ধারাবাহিকতা অব্যহত গতি নিয়ে বর্তমান মাদ্রাসায় একীভূত হয়ে যায়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের শেষ বছর গুলোতে রাজনৈতিক দ্বন্ধ বিক্ষুদ্ধ সময়কালে পশ্চিম বঙ্গ হতে জমি বিনিময়ের মাধ্যেমে হিজরত করত: শুভাগমন করেন দুই বাংলার প্রখ্যাত আলেম শায়খুল হাদীস আল্লামা আবু মুহাম্মদ আলীমুদ্দীন নদীয়াভী(রহ:)। তিনি আমাদের পার্শ্ববর্তী ভোলাব গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদীসের নেতৃবৃন্দের সাথে দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন। অত:পর আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের সহ সভাপতির পদ অলংকৃত করে গেছেন।
এদিকে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দিন দিন ব্যাপক আকার ধারণ করে। শুরু হয় স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, অতঃপর স্বাধীনতা। পারিবারিক ভাবনা, দেশের রাজনৈতিক অবস্থার এহেন উত্তাল দিনগুলোতেও মুহতারাম দ্বীনি খেদমতে জমঈয়তের নেতৃবৃন্দের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগযোগ রক্ষা করে গেছেন।
অত্র এলাকার জমঈয়তের এক প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা শায়খ রঈসুদ্দীন আহমদ সাহেবের (ওরফে খশরু মৌলভী) মাধ্যমে আল্লামা আবু মুহাম্মদ আলীমুদ্দিন নদীয়াভী(রহ:) সাহেব অত্র এলাকায় দ্রুত পরিচিত হয়ে উঠেন। ধর্মভীরু প্রবীণদের মধ্যে আলহাজ্ব ইউসুফ আলী ফকির সাহেবের প্রচেষ্ঠায় শুরু হয় কুরআন পাকের তাফসীর মাহফিল। এই মহতী জালসা ফকির সাহেবের পাঁচরুখী বাজারস্থ ব্যবসা কেন্দ্রে আরম্ভ হয়। এই পবিত্র জালসায় তদানীন্তন ধর্মভীরু বিশিষ্ট জনরা সমবেত হতেন। এক বিরল দৃশ্য যা দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল।
এ দ্বীনি তাফসীর মাহফিলের উদ্যোক্তা আলহাজ্ব ইউসুফ আলী ফকির এবং এলাকার বিশিষ্ট ধর্ম প্রাণ মুরব্বীয়ান যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শায়খ রঈসুদ্দীন আহমদ, মৌলভী ফিরোজ মিয়া, আলহাজ্ব মুলুক চাঁন ভূঁইয়া, আলহাজ্ব এ কে শামসুদ্দীন আহমদ, আলহাজ্ব মুহাম্মদ আলী, সোনা মিয়া ভূঁইয়া প্রমুখ নেতৃস্থানীয়সহ আরও অনেকে।
এই সময় থেকে নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাকে বৃহত্তর আঙ্গীকে রূপান্তরের ইচ্ছা আকাঙ্খা জনাব ফকির সাহেবকে যেন অধীর করে তুলছে। অতঃপর আরম্ভ হয় আলোচনা বৈঠক। ছোট ছোট অনেক মতৈক্য সভা যা এ মহান প্রতিষ্ঠানের বুনিয়াদ বিনিমার্ণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আল্লাহ্ পাকের রহমত ও বরকতে ঘনিয়ে এল আনুষ্ঠানিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার শুভ দিন।
আলহাজ্ব ইউসুফ আলী ফকির সাহেবের নারায়ণগঞ্জস্থ নিজ বাসভবন “আমিনা মঞ্জিলে” নিম্নোক্ত তারিখে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তরিখঃ ২০শে রমযান দিবাগত রাত বাদ এশা। ১৩৯৪ হিজরী ৭ই অক্টোবর ১৯৭৪ঈসায়ী, ২০শে আশ্বিন ১৩৮১ বাংলা রোজ: সোমবার দিবাগতরাত্রি।

শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আগমনের পর আর কোন নবী বা রাসূল আগমন করবেন না। শেষ গ্রন্থ আল- কুরআন নাযিলের পর ওহী বন্ধ আর কোন কিতাব নাযিল হবে না। কিন্তু বিশ্বব্যাপী দাওয়াতী কার্যক্রম কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে। তারই প্রয়োজনে প্রকৃত দাঈ তৈয়ার করা দরকার। সেই সুবাদে পাঁচরুখী এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভ্রাতৃমন্ডলীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আলহাজ্ব ইউসুফ আলী ফকীর সাহেবের সক্রীয় উদ্যোগে এবং শায়খ আবু মুহাম্মদ আলীমুদ্দীন সাহেবের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠে এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মাদ্রাসা দারুল হাদীস সালাফিইয়াহ্। যার মনোগ্রাম হল ওহীর সূচনা-اقرأ باسم ربك الذى خلق
প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৪০ বছর যাবত ধর্মীয় শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বর্তমান ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তর দাওরা-ই-হাদীস পর্যন্ত শিক্ষাদানসহ দেশ-বিদেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নানা বিধ দ্বীনি খিদমত অত্যন্ত সুনাম ও সফলতার সাথে আঞ্জাম দিয়ে চলছে।

কপিরাইট © ২০২১ | মাদরাসা আইটি কর্তৃক সরবরাহকৃত